Menu
menu-icon close
  • ভাল্লাগসে
  • কস্কি মমিন

দ্যা আনসাং হিরো অফ ৭১-জগত জ্যোতি দাস

Thumbnail

by Bishal Dhar

১১:২১, ১৬ ডিসেম্বর ২০২২

দ্যা আনসাং হিরো অফ ৭১-জগত জ্যোতি দাস

আমাদের বাংলাদেশীদের সবচেয়ে বড় আবেগের জায়গা কোনটি, যেখানে আসলে সবাই একমত- তা আমাদের ‘মুক্তিযুদ্ধ’। বীরশ্রেষ্ঠদের নাম তো আমরা সবাই কম বেশি জানি; কিন্তু আরো কত এমন মুক্তিযোদ্ধা আছেন, যারা বীরশ্রেষ্ঠদের তালিকায় নেই হয়ত, তাদের কয়জনের নাম আমরা জানি? সময়ের স্রোতে বা অন্য যেকোন কারনেই হোক তাদের সম্পর্কে তেমন কিছুই আমরা জানিনা। আজ কথা বলবো মুক্তিযুদ্ধের হাজারো স্মৃতির ভীড়ে হারিয়ে যাওয়া এমন এক নায়ক, ভাটি অঞ্চলে পাকবাহিনীর মনে ত্রাশ সৃষ্টি করা দাস পার্টির প্রধান বীরবিক্রম জগতজ্যোতি দাস’কে নিয়ে। হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে জন্ম নেওয়া জগত জ্যোতি দাস ৫ নম্বর সেক্টরের টেকেরঘাট সাবসেক্টরে ৪২ জনের দলের দায়িত্ব পান, এই দলটিই পরে দাস পার্টি নামে পরিচিত পায়। নিজের দাস পার্টির মাধ্যমেই ভাটি অঞ্চলে পাকবাহিনীর ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। ভাটিবাংলার বিশাল হাওরবেস্টিত এলাকা – সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জের প্রায় প্রতিটি থানা মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন করেছিলেন তিনি আর তার দাস পার্টি। এমনকি যুদ্ধের সময় সে অঞ্চলে তাঁর দাপট এত বেশি ছিলো যে পাকিস্তান সরকার ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়েছিলো “এই রুট দিয়ে চলাচলকারী ব্যক্তিদের জানমালের দায়িত্ব সরকার নেবে না”।

যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পাকিস্তানিদের রুখে দেওয়ার জন্যই চলে যান ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ইকো-১ ট্রেনিং ক্যাম্পে। সেখানে যুদ্ধের যাবতীয় রনকৌশল শিখে নিজেকে দক্ষ সৈনিক হিসেবে তৈরি করেন। ফিরে এসে তিনি ও তাঁর দাস পার্টি অনেকগুলো অপারেশন পরিচালনা করেন। এর মধ্যে বার্জ অপারেশন, পাহাড়পুর অপারেশন,বানিয়াচং থানা অপারেশন এবং বদলপুর অপারেশন ছিলো বেশ কিছু বড় সফল অপারেশন। এর মধ্যে বার্জ অপারেশনে পাকবাহিনীর বার্জে আক্রমণ চালিয়ে বার্জটি নিমজ্জিত করে ফেলেন তারা। জগত জ্যোতি এবং দাস পার্টি পাকবাহিনীর কাছে এমন এক আতংকের নাম হয়ে গিয়েছিলো যে তাদের ভয়ে ভৈরব থেকে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত নৌ চলাচল বন্ধ ঘোষনা করতে বাধ্য হয় পাক আর্মি এবং এয়ার সাপোর্টসহ বিশেষ কমান্ডো টীম পাঠানো হয়েছিল শুধুমাত্র জগত জ্যোতি’কে নির্মূল করার জন্য।

অনেকগুলো সফল অপারেশনের পর অবশেষে ১৬ নভেম্বর বাহুবল অপারেশনে শহীদ হন এই মহান বীর। এই অপারেশনে পাকবাহিনীর আক্রমনে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় দাস পার্টি। তখন বাকিদের জীবন বাঁচানোর জন্য সবাইকে নিরাপদ জায়গায় যাওয়ার সুযোগ করে দিয়ে নিজে একাই এলএমজি দিয়ে পাকিস্তানিদের আটকে রাখেন। যুদ্ধের এক পর্যায়ে ম্যাগজিন লোড করে শ্ত্রুর অবস্থান দেখতে গিয়ে গুলি এসে লাগে তার চোখে, সেখানেই শহীদ হন তিনি।

রাজাকাররা তার লাশ খুঁজে পেয়ে পাকবাহিনীকে খবর দেয় এবং জ্যোতির মৃতদেহটি আজমিরীগঞ্জ বাজারে নিয়ে যায়। রাজাকাররা জ্যোতি হত্যার ঘটনা ছড়িয়ে দিয়ে সাধারণ মানুষকে ভয় দেখানোর জন্য জ্যোতির মৃতদেহকে আজমিরীগঞ্জ গরুর হাটে একটি খুঁটির সঙ্গে ঝুলিয়ে পেরেক মেরে রাখে। তার পরিবারের লোকজনকেও জোর করে ধরে আনা হয় তার লাশ দেখানোর জন্য। তার দেহ সৎকার করার সুযোগও পায়নি তার পরিবার; কালনি নদীর পানিতে তার নিথর দেহ ভাসিয়ে দিয়েছিলো রাজাকারেরা।

প্রথম ব্যক্তি হিসেবে সর্বোচ্চ মরণোত্তর রাষ্ট্রীয় পদক দেওয়ার ঘোষণা করার পর ১৯৭২ সালে বীরবিক্রম খেতাবে ভূষিত করা হয় মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখা এই বীর যোদ্ধাকে। বর্তমান প্রজন্ম ঠিকমত হয়ত জানেও না স্বাধীনতা যুদ্ধে ভাটি এলাকায় কিভাবে দাপিয়ে বেড়িয়ে ট্রেইনড পাকিস্তানি আর্মিকে তটস্থ করে রাখতেন জগত জ্যোতি দাস ও তাঁর দাস পার্টি। 

SHARE THIS ARTICLE